মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায়
আগে জেনে নিই মানসিক স্বাস্থ্য বলতে কি বুঝায়?
![]() |
| মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায় |
মানসিক স্বাস্থ্য বলতে একজন মানুষের মনের স্বাস্থ্যকে বুঝায় যা মনের একটি স্বায়ী অবস্থা এবং বিবেকের সুস্থতাকে বুঝায়। একটা পরিস্থিতিতে কিরূপ আচরণ করা উচিত, একটা বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গী মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত।
শরীর ও মন একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু আমরা শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে যতোটা যত্নশীল মনের স্বাস্থ্য নিয়ে তার ছিটেফোঁটাও না।
অথচ মন ভালো না থাকলে শরীরে তার প্রভাব পরে। তাই মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন।
তৃতীয় শ্রেণির চাকরির প্রস্তুতি কীভাবে নিবেন
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়।
এখানে আপনাকে কিছু সহজ কথা বলি। কিছু সুন্দর চর্চার বিষয় শেয়ার করি যা করে আপনি খুব সহজে ভালো থাকবেন। ধরেই আমি আপনাকে সাইকিয়াট্রিস্ট, কাউন্সিলর বা যোগব্যায়াম, মেডিটেশন এ নিয়ে যাচ্ছিনা।
প্রথমেই কথা বলছি সেসব বিষয় নিয়ে যেগুলো আপনার হাতে। আপনি চাইলেই করতে পারবেন।
ক্যারিয়ার কি? ক্যারিয়ার ভাবনা এবং কিছু সহজ কথা
অনেক সময় এমনটা হয় আপনি অনবরত কাজের চাপে একঘেয়েমিতে ভোগছেন, কিংবা কাজে সফল হতে না পেরে বিষন্নতায় ভুগছেন, কিংবা প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট, বা ব্রেক আপের মতোন সমস্যা। কখনো পারিবারিক বোঝাপড়ার অভাব আপনাকে বেশ ভোগায়।
তখন আমরা একা হয়ে পরি। আমরা যেহেতু জেনারেশন গ্যাপের ভোগান্তির শিকার তাই প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে মাকে জড়িয়ে কাঁদতে পারিনা, কিংবা কাছের বন্ধুর অভাবে শেয়ার করার জায়গাট ফাঁকা থাকে। সে সময় আপনার কিছু কাজ, কিছু চর্চা, কিছু চিন্তা আপনাকে ভালো করে তুলতে পারে।
চলুন জেনে নিই
১) বই পড়ুন
মানুষ বই পড়ে কখনো ঠকে না। কিছু না কিছু পায়। বই পড়ে চিন্তার মাধুর্য আসে। যা আপনাকে একজন উন্নত মানুষে পরিণত করে। ভেবে দেখুন একজন মানুষের জীবনে অক্লান্ত পরিশ্রম কিংবা এমন কিছু চিন্তা যা কাগজে লিখার পর ১ মিলিয়ন মানুষ তা পড়েছে... সেখানে কি আছে? সেখানে নিশ্চয়ই এমন কিছু চিন্তা এমন কিছু শক্তিশালী বাক্য আছে যা মানুষকে টেনেছে। আপনি ১০০ টাকা খরচ করে পেয়ে যাচ্ছেন তা হাতে!! অনেক বেশি না এটা?
বই পড়ার সময় যা করবেন
ক) বুকমার্ক
যেই লাইনটা আপনাকে ছুঁয়ে যাবে সেখানে বুকমার্ক রাখুন। কোনো এক হতাশার মুহুর্তে ওই একটা লাইন ঔষধের মতোন কাজে দিবে।
খ) লগনোট
বই পড়া শেষে গোটা বুক রিভিউ লিখবেন খুব ছোট্ট একটা নোটে। আপনার যেই লাইনটা ভালো লেগেছে শুধু সেটাই। দেখবেন এই রিভিউ আপনার বোঝাপড়া বাড়াতে সাহায্য করবে।
২) চারপাশ বদলান
বলা হয়ে থাকে আপনার চারপাশের পরিবেশ আপনার ওপর প্রভাব ফেলে। খুব বেশি খারাপ লাগছে আপনার। কিন্তু আপনার কাছে বালি ট্যুর দেওয়ার টাকা নাই, বন্ধু নাই, কিছু নাই।
ভেবেদেখুন পথ গুলো আপনার জন্য উন্মুক্ত। বাইরে বেড়িয়ে হাঁটুন। ১০ টাকার চটপটি কিনে দেন নিজেকে। কিংবা ১০ টাকার বাদাম খেতে খেতে রাস্তা ঘাট মানুষ সব দেখেন।
ধরেন পড়ার টেবিলকে অসহ্য লাগছে। ছাদে যান। অফিস কে টক্সিকাল লাগছে বেসিনে যান, বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রোদ দেখেন, রান্না করতে ভালো না লাগলে বাইরে হোটেলে যান, ডাল ভাত খান।
৩) কাজ করুন
কাজ একমাত্র জিনিস যা আপনাকে বড় করে তুলবে যা আপনাকে ফেরত উপহার দিবে। তাই ছোট ছোট কাজ বের করুন যা করে আপনি আনন্দ পান। গিটার বাজান, ডুডল করেন, ছবি আঁকা শেখেন, বা বেশি খারাপ লাগলে রুম ঝাড়ু দেন কিংবা পড়ার টেবিলটা গুছান। অথবা জমে থাকা কাপড় গুলো ধুয়ে রোদে শুকাতে দেন।
মোটা কথা খারাপ লাগাকে কাজে রুপান্তর করেন।
৪) ব্যায়াম করুন
আপনাকে একটা হেইলরিয়াস কথা বলি। দিন দুনিয়া ভালো না লাগলে আপনাকে ব্যায়াম খুব রিলিফ দিতে পারবে। আপনি জিমে যেতে নাই পারেন বেলকনি, ছাঁদ, পথ ঘাটে হাঁটুন। অথবা ১০ টা পুশ আপ নেন, কিংবা রানিং করেন। দেখবেন ভুলে গেছেন কেন আপনার মন খারাপ।
৫) খাবার
আমি মন খারাপ হলে নিজেকে ট্রিট দিই। হয়তো সেটা অস্বাস্থ্যকর জাংক ফুড বা স্ট্রিট ফুড ই। মন ভালো হয়ে যায়। আপনি বেশি সচেতন হলে খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার রাখেন যেগুলা উপকারী হবে।
৬) যন্ত্র নির্ভরশীলতা বন্ধ
স্ক্রিনটাইম হতাশা বাড়ায়। তাই ফোনটা ১ ঘন্টা বন্ধ করে বাস্তব পৃথিবীতে ডুবেন।আশেপাশে যে থাকে ১০ মিনিট কথা বলেন, বা ঘুমান, বা নিজে গান করেন। বোকা বাক্সে বন্দী না হন!
৭) সখ এবং সখ্যতা
আপনার প্রিয় সখকে গুরুত্ব দিন। ধরেন আপনি গাছপালা ভালোবাসেন। বারান্দায় একটা টব ঝুলিয়ে দিন, ছাদে ২ টা ফুলের চাড়া লাগান। রোজ জল দেন। দায়িত্বশীলতা বাড়বে। আপনি টের পাবেন যত্ন করে কাউকে আগলে রেখে বাড়িয়ে তুলার সুখ❤️
কিংবা আপনি বই লিখতে চান, লিখেন না সেসেব কথা গুলো। পাবলিশ নাই হলো, কিন্তু নাতি পুতিকে দেখিয়ে সুখ পাবেন দেখ তোদের ঠাকুমা কিসব পাগলামি করতো।
৮) চিন্তার জগৎ প্রসারিত করুন
প্রায়োরিটি বদলে ফেললে সমাধান হয়ে যায় সব। আপনি অন্য কিছু ভাবেন অন্য ভাবে ভাবেন। উন্নত চিন্তা আপনাকে সবার চেয়ে আলাদা করবে। আরেকটু সহজ করে ভাবেন, আরেকটুখানি ছাড় দেন, আরেকটু পাত্তা না দেন
দেখবেন সব সহজ হয়ে যাবে।
টক্সিকাল না হয়ে অপর দিকটাকেও ভাবেন। দেখবেন জীবন সুন্দর।
আমার দেয়ালে একটা কথা লিখা। তা শেয়ার করি
"Cultivate Resilience" এটা আমার প্রিয় বই ইকিগাই থেকে পাওয়া❤️✌️
আমার মুড সুয়িং হলে এই লাইনটা আগে পড়ি।
৯) নিজের সাথে বোঝাপড়া
আমরা অনেক সময় নিজেদের নিজেই বুঝিনা। নিজেকে বুঝিনা বলেই পরিস্থিতি অনুকূলে থাকেনা।
১০) পাওয়ার ন্যাপ
এটা আমি ব্যক্তিগত ভাবে ফলো করি। খারাপ লাগলেই পাওয়ার ন্যাপ নিই। খারাপ পরিস্থিতি বদলে যায়।
১১) কুইক ম্যাডিটেশন
বিষয়টা এমন নয় যে আপনি সময় ধরে আগরবাতির ঘ্রাণে মেডিটেশন করবেন। বিষয়টা হলো আপনি এখন সে পরিস্থিতিতে নেই। কি করবেন তখন?
চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মনে মনে যা আপনি চাইছেন তা ভাবেন বা স্রষ্টাকে কৃতজ্ঞতা দিন। দেখবেন ভাল্লাগবে। আমি সাধারণত এটা পরীক্ষার হলে করি। পরীক্ষা শুরু হওয়র আগের ৫-১০ মিনিট। কাজে দেয় খুব।
মানসিক ভাবে ভালো থাকলে আপনি জীবনে অনেক যুদ্ধে সহজে জিতে যেতে পারবেন। মন ভালো থাকলে মনের জোড়ে শরীর ও অনেক স্ট্যামিনা পায়। তাই মনকে ভালো রাখেন দেখবেন আপনার জগতে আপনি একজন সেরা মানুষ। আপনি সুখী হন, সুন্দর চর্চা করেন দেখবেন চারপাশের পৃথিবী বদলে গেছে।
মনে রাখবেন
We are born to adjust" সুতরাং মানিয়ে নিন বেড়ে ওঠুন...
ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন
